শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ধানসিঁড়ি পূজামণ্ডপের পাশে বিশ্বজিতের প্রতিমা তৈরির অস্থায়ী কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন কারুকাজের ছোট-বড় শত শত সরস্বতী প্রতিমা। লাইন ধরে যানবাহনে করে সেসব প্রতিমা বাড়িতে-মণ্ডপে নিয়ে যাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বিশ্বজিৎ বলেন, এবার তিনি ২৫৫টি প্রতিমা গড়েছেন। ছয়জন সহযোগীকে নিয়ে প্রায় চার মাস ধরে কাজ করেছেন। সেই কাজ শুক্রবার ভোরে শেষ হয়েছে। সারা দিন প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে।
কেউ কেউ আগে থেকেই নির্দিষ্ট প্রতিমা বায়না দিয়ে রেখেছেন। কোনো কোনো ভক্ত আবার এসে পছন্দ করে নিজের মত প্রতিমা নেন। বড় প্রতিমা সাধারণত বারোয়ারি পূজার মণ্ডপেই বেশি যায় বলে জানান মৃৎশিল্পী।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানের প্রতীক; তিনি সংগীত, শিল্পকলা ও প্রজ্ঞার দেবী। শিক্ষার্থীরা বিদ্যার জন্য সরস্বতীর পূজা করে থাকে।
নিয়ম অনুযায়ী, মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে এই পূজা হয়। শনিবার সেই তিথি। এদিন অজ্ঞতার অন্ধকার দূর হবে এবং বিদ্যা, বাণী ও সুরের প্রতিষ্ঠা হবে এই প্রত্যাশায় সনাতন শিক্ষার্থীরা দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ দিবেন।
দেশের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় শ্রীমঙ্গলে সরস্বতী পূজার আধিক্য বেশি। উপজেলার সহস্রাধিক বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মণ্ডপে এ পূজা হয়। উপজেলায় ১২-১৩ জন শিল্পী প্রতিমা তৈরির কাজ করে থাকেন।
মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল জানান, তার মূল বাড়ি ঢাকা বিক্রমপুরে। তিনি ৩৯ বছর ধরে শ্রীমঙ্গলে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন।
“দূর্গা পূজার পর পরই মানুষের ডাকে আমাকে বিক্রমপুর থেকে শ্রীমঙ্গল চলে আসতে হয়। শ্রীমঙ্গলের মানুষই প্রতিমা তৈরির জন্য জায়গা দেন। সেখানে অস্থায়ী কারখানা করে প্রতিমা বানাই। ৩৯ বছরে শ্রীমঙ্গলে প্রায় ১০ হাজার প্রতিমা বানিয়েছি।”
শ্রীমঙ্গলে সরস্বতী পূজা অনেক বেশি হয়ে থাকে উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ বলেন, এখানে অনেকে দুর্গা পূজার মত প্রতিযোগতা করে সরস্বতী পূজা করে থাকে। তারা ইন্টারনেট থেকে প্রতিমা ছবি এনে দেখায় এবং সেই আদলে গড়ে নেয়। প্রতিটা প্রতিমার নকশা আলাদা। ফলে প্রচুর শ্রম দিতে হয়।
প্রতিমার মূল্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে শিল্পী জানান, এবার তিনি সবচেয়ে ভাল প্রতিমাটি বিক্রি করেছেন ১৫ হাজার টাকায়। আর বাসাবাড়ির ছোট প্রতিমা বিক্রি করছেন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছেন নানা অনুষ্ঠানাধি। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রীমঙ্গল উত্তরশূর শতভিষা পর্যটন পার্কে শ্রীমঙ্গল ব্রন্ডব্যান্ড আয়োজন করেছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সিলেট বিভাগের গুণী শিল্পীদের।
এ পূজার আয়োজক রাজীব দেব ও সনৎ দেব জানান, তারা ঢাকায় থাকেন। এবার প্রথম তারা শ্রীমঙ্গলের মানুষকে ভিন্ন কিছু উপহার দিতে নান্দনিক পরিবেশে দেবীর পূর্জাচনা করছেন।