জাফর আহমদঃঃ ভোটাদের স্বতঃস্ফুত উপস্থিতি এবং আইন শৃ্খংলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কুলাউড়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশে ৩য় ধাপে ও কুলাউড়ায় ১ম দফা বরমচাল, ভূকশিমইল, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মনবাজার, কাদিপুর, রাউৎগাঁও ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে ২৩ এপ্রিল শনিবার অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে প্রায় ৭০ভাগ ভোটার উপস্থিত হন।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দেশের অন্যান্য স্থানের ভোটগ্রহণের চাইতে কুলাউড়ার চিত্র ছিল ভিন্ন। নির্বাচনের দিনে প্রতিটি ইউনিয়নে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ছাড়াই শান্তিপ্রিয় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিপূর্ণ ভোটের অতিত ঐতিহ্যকে আরেকবার জানান দেন কুলাউড়াবাসী। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘেœ ভোট দেয়ায় বেজায় খুশি সাধারণ ভোটাররা। জনতার রায়ে কুলাউড়ার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে আওয়ামীলীগ, ২টিতে বিএনপি ও ২টিতে বিএনপি বিদ্রোহী এবং ১টিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ১জন নারী বিজয়ী হন। কুলাউড়া তথা জেলার মধ্যে প্রথম নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দেন কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের নার্গিস আক্তার বুবলি। অপর দিকে জনতার রায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অনেকটা ভরাডুবি হয়। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভুকশিমইল ইউনিয়নের ৪ বারের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু পরাজিত হন প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির আজিজুর রহমান মনির মাস্টারের সাথে।
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী জয়চন্ডী ইউনিয়নের কমর উদ্দিন আহমদ কমরু ও রাউৎগাঁও ইউনিয়নের আব্দুল জলিল জামাল বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে চমক দেখান। কাদিপুর ইউনিয়নে এই প্রথম বিএনপির কোন প্রার্থী বিজয়ী হলেন। হাবিবুর রহমান ছালাম প্রায় ২ হাজার ভোট বেশী পেয়ে জয়লাভ করেন। ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নে জয়ের মালা পরেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রভাষক মমদুদ হোসেন। তিনি দলীয় বিদ্রোহী মুহিবুর রহমানকে প্রায় দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। বরমচাল ইউনিয়নে বিএনপি ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সহজেই দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ প্রার্থী আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাহান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২৩ এপ্রিল রাতে স্ব স্ব ইউনিয়নের চুড়ান্ত ফলাফল জানতে কয়েক হাজার সমর্থক ভিড় জমান উপজেলা পরিষদের সামনে। একে একে চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষনা করেন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা স্ব স্ব রিটার্নিং অফিসাররা। তারা হলেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শরীফ উল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার। বিজয়ী প্রার্থীদের সমর্থকরা প্রার্থীসহ মিছিল দিয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলে।
বেসরকারী ভাবে ঘোষিত চুড়ান্ত ফলাফলে জানা যায়, বরমচাল ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাহান নৌকা প্রতিক নিয়ে ৩,৮৬১ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ছিলেন, বিএনপির আব্দুল মোক্তাদির মুক্তার ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ২,৪৭৫ ভোট পান। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ইছহাক চৌধুরী ইমরান আনারস প্রতিক নিয়ে ২,১২১ ভোট ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল হোসেন চশমা প্রতিক নিয়ে ৫৭৮ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ১১,৮৫৬ ভোটারের মধ্যে ৯,১৫৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৭.২৪ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।
জয়চন্ডী ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু আনারস প্রতিক নিয়ে ৭,৩৩৯ ভোট পেয়ে পূণরায় নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামীলীগের আব্দুর রব মাহাবুব নৌকা প্রতিক নিয়ে ৬,৩৫৫ ভোট পান। এছাড়াও বিএনপির রুমেল খান ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ৬৪০ ও আল ইসলাহ প্রার্থী আব্দুল জলিল চশমা প্রতিক নিয়ে ১৭০ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ১৯,৯৭২ ভোটারের মধ্যে ১৪৭১৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৩.৭৮ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।
রাউৎগাঁও ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল আনারস প্রতিক নিয়ে ৪,১০২ ভোট পেয়ে পূনরায় নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি বিএনপির আব্দুল মুহিত সোহেল ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ৩,২৩৭ ভোট পান। এছাড়া আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোঃ আকবর আলী নৌকা প্রতিক নিয়ে ২,৬০৫ ভোট ও খেলাফত মজলিশ প্রার্থী এনামুল হক মাহতাব দেওয়াল গড়ি প্রতিক নিয়ে ১৫১ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ১৩,৩৭৭ ভোটারের মধ্যে ১০,২৩৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৬.৫৪ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।
কাদিপুর ইউনিয়নে ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির হাবিবুর রহমান ছালাম ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ৪,৯৭৯ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর আলম শাহান আনারস প্রতিক নিয়ে ৩,০৪৮ ভোট পান। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিক আহমদ চশমা প্রতিক নিয়ে ১৪৫৭ ভোট, আওয়ামীলীগের প্রার্থী সেলিম আহমদ নৌকা প্রতিক নিয়ে ৫২৮ ভোট, আল ইসলাহ প্রার্থী জিয়াউল ইসলাম মুহিত মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে ২০৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছালিক আহমদ নিলয় রজনীগন্ধা প্রতিক নিয়ে ১১৩ ভোট ও খেলাফত মজলিশ প্রার্থী এমদাদুল হক দেওয়াল গড়ি প্রতিক নিয়ে ৫৮ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ১৪৩৬১ ভোটারের মধ্যে ১০,৫৪৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৩.৪৬ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।
ভুকশিমইল ইউনিয়নে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিএনপির আজিজুর রহমান মনির ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ৪,৮৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামীলীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রেনু নৌকা প্রতিক নিয়ে ৪,৩৭৭ ভোট পান। অপর প্রার্থী জামায়াত সমর্থিত আতিকুর রহমান আনারস প্রতিক নিয়ে ১,৫০৬ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ১৪৯৪৩ ভোটারের মধ্যে ১০,৯৮৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৩.৫৪ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।
ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নে ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মমদুদ হোসেন নৌকা প্রতিক নিয়ে ৪,৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী মুহিবুর রহমান মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে ৩,১৭৮ ভোট পান। এছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহমদ আনারস প্রতিক নিয়ে ২,৭০২ ভোট, বিএনপি প্রার্থী বদরুল হোসেন খান ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ২,৩৯২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন এলাইচ চশমা প্রতিক নিয়ে ১,২০৮ ভোট ও জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন খান লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে ৫২৩ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ২০,১৮৯ ভোটারের মধ্যে ১৫,০৭২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৪.৬৫ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।
কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহানের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী নার্গিস আক্তার বুবলি আনারস প্রতিক নিয়ে ২,১৮৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোঃ লুৎফুর রহমান চৌধুরী নৌকা প্রতিক নিয়ে ১৯৯৩ ভোট পান। এছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জুবের আহমদ খান চশমা প্রতিক নিয়ে ১৭৬৩ ভোট, বিএনপির সুফিয়ান আহমদ ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে ১৪৫৫ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আকমল হোসেন শুভ ঘোড়া প্রতিক নিয়ে ৪৫৯ ভোট পান। এ ইউনিয়নে ১০,৭২১ ভোটারের মধ্যে ৮,০২২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ৭৪.৮৩ শতাংশ ভোট কাষ্টিং হয়।