মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৭২ লাখ টাকার টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ

731

জাফর আহমদ, কুলাউড়া প্রতিনিধি কুলাউড়ায় সমাজসেবা অফিসের ৭২ লাখ টাকার টেন্ডারে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে করে সরকার কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে । এ ঘটনায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জড়িত থাকায় সাধারণ ঠিকাদাররা মুখ খুলতে পারছে না অন্যদিকে উপজেলা সামাজসেবার অনিয়মের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে।

ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক পরিবারে প্যাকেটজাত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক দ্রব্য সরবরাহের জন্য দরপত্র আহবাহন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কুলাউড়া উপজেলা সমাজসেবা অদিদপ্তর । টেন্ডার ড্রপের শেষ তারিখ ছিলো ২২ মার্চ সোমবার ১২টা পর্যন্ত । ১৫টি সিডিউল বিক্রি হলেও টেন্ডার ড্রপের দিন মাত্র ৫টি সিডিউল ড্রপ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানান, তারা সিডিউল ক্রয় করলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে টেন্ডার ড্রপ করতে পারেনি। এছাড়াও কয়েক ঠিকাদারের সাথে সমঝোতা করারও অভিযোগ রয়েছে। এতে করে সরকার কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে । অধিকসংখ্যক ঠিকাদার টেন্ডার ড্রপ করতে পারলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমের সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজটি প্রদান করা যেতো।

২৩ মার্চ বিকাল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দরপত্র আহ্বানকারী কমিটির সদস্যরা এবং অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারের উপস্থিতিতে দরপত্রের বাক্স খোলা হয়। ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এতে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা কুলাউড়ার জামাল উদ্দিন (৫৬ লাখ ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা), দ্বিতীয় দরদাতা জুড়ীর ঘোষ অটো রাইছ মিল (৫৮ লাখ, ৯০ হাজার ৬২৬ টাকা), তৃতীয় দরদাতা কুলাউড়ার বিলাশ এন্টারপ্রাইজ (৬৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা),চতুর্থ দরদাতা হবিগঞ্জের হাবিবুর রহমান (৭১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫০ টাকা) এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ দরদাতা শ্রীমঙ্গলের মেসার্স আদমজী ট্রেডিং (৭২ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা) পাঁচ জান দরদাতা নির্বাচিত হন। টেন্ডারের কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করার জন্য সামজসেবাকে কর্মকর্তা কে দায়িত্ব দেওয়া হয় । কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কার্যাদেশ পাওয়ার প্রথম তালিকায় থাকা কুলাউড়ার জামাল উদ্দিনকে কার্যাদেশ না দিয়ে পঞ্চম বা সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আদমজী ট্রেডিংকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচজন ঠিকাদারের মধ্যে শ্রীমঙ্গলের মেসার্স আদমজী ট্রেডিং ছাড়া বাকি ৪ জন অনিয়ম- দুনীর্তির অভিযোগ তুলেছেন। কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলামও ৫ম দরদাতাকে কাজের অনুমোদন দেয়ার জন্য সমাজসেবা অফিসারকে ফোনে নির্দেশ দেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারও ৫ম দরদাতা কে কার্যাদেশ দেন ।

প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, দরপত্র বাক্স খোলার পর কুলাউড়া সমাজসেবা অফিসার কল্লোল সাহা সিদ্ধান্ত জানাতে গড়িমসি করেন। কাগজপত্র যাচাইয়ের অজুহাতে ২৩ মার্চের বদলে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত না জানানোর কারণে তাদের সন্দেহ হয়।

তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা বিলাশ অভিযোগ করে বলেন, এর আগে ২ এপ্রিল শনিবার অফিস বন্ধের দিন সর্বনিম্ন দরদাতাদের কাগজপত্র রদবদল করে পঞ্চম দরদাতাকে কাজ পাইয়ে দিতে তার কাগজপত্র সংশোধন করা হয়। ঠিকাদারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে সরকারে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন হয়েছে ।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কল্লোল সাহা কুলাউড়া সংবাদকে বলেন, টেন্ডার স্বচ্ছতার সাথেই করা হয়েছে। তবে টেন্ডার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানান।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম কুলাউড়া সংবাদকে বলেন, ‘এই কমিটির সভাপতি ইউএনও। আমি কোনও দায়িত্বে নেই। আমার কোনও সংশ্লিষ্টতাও নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts