হঠাৎ পানির প্রবেশে ঘর ছাড়ার বেদনা
অপ্রত্যাশিতভাবে পানি ঢুকে পড়ায় ফেনীর বহু মানুষকে জীবন বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে হয়েছে। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করলেও, ঘরে ফেরার উপযোগী পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। উপজেলা সদর, ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সাত দিনের বন্দিদশা শেষে ঘরে ফেরার প্রচেষ্টা
টানা এক সপ্তাহ ঘর থেকে দূরে থাকা মানুষগুলো নিজেদের বাসস্থানের খবর নিতে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। অবশেষে সোমবার, পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজেদের ঘরবাড়ি দেখতে রওনা হন।
ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি দেখে হৃদয়বিদারক দৃশ্য
বিধ্বস্ত সড়ক ও হাঁটু সমান পানি পেরিয়ে ঘরে পৌঁছে অনেকেই চোখের সামনে দেখেন তাদের সাধের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকদিন পানির নিচে ডুবে থাকার ফলে বহু মানুষের তিলে তিলে গড়ে তোলা আশ্রয়স্থানগুলো এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সর্বস্বান্ত মানুষ
২০ অগাস্ট মঙ্গলবার উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে অধিকাংশ কাঁচা বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। নিজেদের ঘরের এই করুণ অবস্থা দেখে অনেকেই আশ্রয়ের সন্ধানে স্বজনদের বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।
বন্যার তীব্রতা ও পরবর্তী বিপর্যয়
সোমবার ফেনী শহর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যার ভয়াবহতা। পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে বিপর্যয়ের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত ২০ অগাস্ট দুপুর থেকে শুরু হওয়া বন্যা পরদিন থেকে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, যার প্রভাব এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয়
বন্যার কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়নি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও তেমন উন্নত হয়নি, ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটছে।
ত্রাণ কার্যক্রম ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
শহরের প্রধান সড়কগুলোতে এখনো পানি থাকায় যানবাহন চলাচল সীমিত। শুধুমাত্র ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোই বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে বা ত্রাণবাহী যানবাহনে করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তারা আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে সংগ্রাম করছেন, তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
ব্যক্তিগত গল্প: ওমর ফারুকের দুর্ভোগ
ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ফেনী শহরের দিকে রওনা দিয়েছেন। তিনি জানান, পানি কমার পর ঘরে গিয়ে দেখেন তার মাটির বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি শহরের সার্কিট হাউজের কাছে ফুপাতো বোনের বাসায় আশ্রয়ের আশায় যাচ্ছেন, যদিও সেখানে জায়গা পাবেন কি না তা নিশ্চিত নন।
আশ্রয়কেন্দ্র থেকে স্বজনদের বাড়িতে ফিরে যাওয়া
ষাটোর্ধ্ব নূর ইসলাম ও তার স্ত্রী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রামে ছেলের বাসার পথে রওনা দিয়েছেন। তার বাড়িঘরও বন্যায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে আরো দিন কাটানো সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
স্বজনদের খোঁজে উল্টো পথে যাত্রা
অনেকে আবার শহর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় স্বজনদের খোঁজে যাচ্ছেন। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির খবর জানলেও প্রিয়জনদের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকায় তারা পায়ে হেঁটে বা ত্রাণবাহী ট্রাকে করে যাত্রা করছেন।
ভবিষ্যতের প্রতি অনিশ্চয়তা ও আশার আলো
বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেনীর মানুষজন তীব্র দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আশ্রয় ও খাদ্যের সংকট, ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ি এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সবার মিলিত প্রচেষ্টা ও সহায়তার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার আশা করেন তারা।